ট্রেনে চড়া এবং নাটোর ভ্রমন
আমার বাবার অফিস থেকে প্রতিবছর বেড়াতে যাওয়া হয়। বাবার অফিসের সকলে বেড়াতে যান এবং বাবা আমাকেও সাথে করে নিয়ে যান। এবারে ঠিক হলো নাটোরের রানীভবন, উত্তরা গণভবন যাব এবং নাটোরের কাঁচাগোল্লা খাবো। বাবা আগের দিন অনলাইন থেকে ট্রেনের টিকেট করে রেখেছিলেন। ট্রেন ছাড়বে সকাল ৯ টা ৪৫ মিনিটে। ভ্রমন করলে আমার বমির সমস্যা হয়, তাই সকালে মা আমাকে তুলসির পাতার রস খায়িয়েদিলেন। বাবা বলে রেখেছিলেন আমাদেরকে সকাল ৮ টার সময় বের হতে হতে হবে। সেই মোতাবেক আমরা ৮ টার সময় বাড়ি থেকে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
বাড়ি থেকে অ্টো নিলাম, প্রথমে আমরা বাবার অফিসে যাবো, তারপর সকলে মিলে একসাথে বাসে উঠবো। অটো আসলে আমরা ৮ টার দিকে বাবার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, বাবার অফিসের সকলে প্রস্তুত ছিল। সবাই মিলে আমঝুপি বাস স্ট্যান্ডে গেলাম এবং আনুমানিক ৮ টা ২০ মিনিটের দিকে বাসে উঠলাম, উদ্দেশ্য চুয়াডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড। চুয়াডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে পৌছালাম। ওখানে থেকে অ্টো নিলাম, উদ্দেশ্য চুয়াডাঙ্গা ট্রেন ষ্টেশন।
আনুমানিক ৯ টা ২০ মিনিটের দিকে চুয়াডাঙ্গা ট্রেন ষ্টেশনে পৌছালাম। বাবা ট্রেনের টিকেট নিলেন। বাবা আমাকে চিপস, বিস্কুট, চকলেট কিনে দিলেন। ট্রেনের প্লাটফর্মে যাওয়ার পরে জানতে পারলাম ট্রেন আজকে দেরি করে আসবে, আনুমানিক ১২ টার দিকে। আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম, বাবার সাথে প্লাটফর্ম ঘুরে ঘুরে দেখলাম, ষ্টেশনের পাশের বাজারে গেলাম, ওভারব্রিজে উঠলাম, বাদাম খেলাম, বাবার সাথে ছবি উঠালাম।
১২ টার দিকে ট্রেন আসলো, আমরা ট্রেনে উঠলাম। ট্রেন থামা এবং ট্রেন চলা দেখে খুব মজা পেলাম। এতো বড় ট্রেন দেখবো কল্পনা করি নাই। ট্রেন চলা শুরু করলো, কিছু দূর যাওয়ার পরে ঝালমুড়ি বিক্রয় করতে আসলো, সুর করে করে ডাকতে লাগলো এই মুড়ি মুড়ি মুড়ি, ঝাল মুড়ি। বাবা সকলকে ঝালমুড়ি দিতে বললেন, আমিও এক প্যাকেট নিলাম। ট্রেনের ঝালমুড়ি খেয়ে খুব মজা পেলাম। বাবাকে বললাম আরও এক প্যাকেট ঝালমুড়ি নিবো। বাবা আরেক প্যাকেট ঝালমুড়ি নিলেন, খুব মজা করে ঝালমুড়ি খেলাম। পরে চানাচুর বিক্রয় করতে আসলো, বাবাকে চানাচুর কিনে দিতে বললাম, বাবা আমাদের সবার জন্য চানাচুর নিলেন। আমার জন্যও নিলেন, খুব মজা করে চানাচুর খেলাম।
ঈশ্বরদী জংশনে পৌছানোর পরে বাবা বনরুটি কিনলেন, সবাই মিলে বনরুটি খেলাম, খাজা খেলাম খুব মজা করে। আনুমানিক ৩ টার দিকে নাটোরে পৌঁছালাম। ঢাকা থেকে বাবার কয়েকটা বন্ধু আসার কথা ছিল। ওনারা আমাদের আসার আগেই নাটোর ষ্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সবাই এক সাথে হয়ে, ষ্টেশন থেকে বের হলাম।
অটো নিলাম উদ্দেশ্য দুপুরের খাবার খাওয়া। অটো করে ইসলামিয়া পচুর হোটেলে গেলাম। এখানে দুপুরের খাবার খেলাম। অনেক ভাল ছিল হোটেলের খাবার, বেশ মজা করে খেলাম। হোটেল থেকে বের হয়ে অ্টো নিলাম, অ্টো করে উত্তরা গণভবনে যাব। উত্তরা গণভবনে পৌঁছানোর পরে বাবা সবার জন্য টিকেট কাটলেন। তারপর গণভবন ঘুরে ঘুরে দেখলাম। উত্তরা গণভবনের চিড়িয়াখানাতে গেলাম। ওখানে গিয়ে হরিণ দেখলাম, হরিণকে পাতা খেতে দিলাম, বানর দেখলাম, বানরকে বাদাম খেতে দিলাম। অনেক গুলো পাখি দেখলাম। পুকুরে অনেক রকমের মাছ ছিল, মাছ গুলো দেখলাম। উত্তরা গণভবনে কামান ছিল। কামান দেখলাম অনেক ছবি উঠালাম। উত্তরা গণভবন থেকে বের হলাম। আবার অ্টো নিলাম, উদ্দেশ্য রানীভবন।
রানীভবনে পৌঁছানোর পরে বাবা সবার জন্য টিকেট কাটলেন। রানীভবনে প্রবেশ করার পরে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, সিমেন্টের তৈরি করা বড় সাপটা দেখে। বাবা আমাদের ছবি উঠাতে চাচ্ছিলেন কিন্তু আমার খুব ভয় লাগছিল। রানীভবন দেখলাম, অন্যান্য ঘর গুলোও দেখলাম, খুব ভাল লাগলো। আম্মুর সাথে আমিও বন্দুক নিলাম। প্রথম দিকে ভয় লাগছিল, পরে বেলুন ফুটাতে পেরে অনেক ভাল লাগলো। ওখানে অনেক গুলো দোকান ছিল, কিছু খেলনা কিনলাম, ডায়রি কিনলাম, কলম কিনলাম। সব মিলিয়ে আমরা রানীভবনে অনেক মজা করলাম।
তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে, রানীভবন থেকে বের হয়ে আবার অ্টো নিলাম, উদ্দেশ্য কাঁচাগোল্লা কেনা, তারপর আবার ট্রেন ষ্টেশনে ফিরে যাওয়া। অটো নিয়ে কাঁচাগোল্লার দোকানে গেলাম, আমরা সকলে অনেক মিষ্টি কিনলাম। অ্টো নিয়ে নাটোর ট্রেন ষ্টেশনে চলে আসলাম। ষ্টেশনে এসে জানতে পারলাম ট্রেন আসতে দেরি হবে ৮ টার দিকে আসবে। আমরা আবার ষ্টেশনের বাহিরে আসলাম, সবাই মিলে নাস্তা করলাম। বাবা তাঁর ঢাকা থেকে আসা বন্ধুদের বিদায় করে দিলেন।
আমরা ৮ টার দিকে ষ্টেশনে এসে জানতে পারলাম ট্রেন এখনও ১ ঘণ্টা পরে আসবে। আমরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ৯ টার দিকে ট্রেন আসলে আমরা ট্রেনে উঠলাম। চুয়াডাঙ্গা এসে পৌঁছাতে প্রায় রাত ১ টা বেজে গেল। বাবা তুষার কাকুকে মাইক্রো নিয়ে আসতে বলে রেখেছিলেন। ষ্টেশনে নামার পরে দেখলাম তুষার কাকু মাইক্রো নিয়ে অপেক্ষা করছেন। ফ্রেশ হয়ে আমরা মাইক্রোতে উঠলাম। অফিসের সকলকে নামিয়ে দিয়ে বাসা পৌঁছাতে রাত প্রায় ২ টা বেজে গেল। ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে ঘুম দিলাম। খুবই ভাল ট্রেন ভ্রমন ছিল এবং নাটোরও খুব ভাল লেগেছিল।